গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা এবারও ছয় দিনে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে। তাবলিগ জামাত আয়োজিত এই সমাবেশকে সফল ও সার্থক করতে বিশ্ব ইজতমা ময়দানের প্রস্তুতির কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৩৫ ভাগ কাজ শেষ করা হয়েছে।
শনিবার মাওলানা জুবায়ের অনুসারী বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মুফতি জহির ইবনে মুসলিম জানিয়েছেন, আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সূরায়ে নেজামের তত্বাবধানে বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে। ইতিমধ্যে ময়দানের প্রায় ৩৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এগিয়ে চলছে ইজতেমার প্রস্তুতি কাজ। আর বাদ বাকি কাজ আগামী ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
এদিকে গাজীপুরের সোনাবানের শহর টঙ্গীর কহর দরিয়াখ্যাত তুরাগ নদের তীরে শুরু হচ্ছে বিশ্ব তাবলীগ জামায়াতের সভাপতিত্বহীন বার্ষিক মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমার শীর্ষ মুরব্বীদের মতবিরোধের কারণে এবারও ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে দু’দফায়। প্রথম দফায় মাওলানা জুবায়ের অনুসারী মুসল্লিরা অংশ নিবেন। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম দফা। এরপর মাঝে ৪দিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফায় শুরু হবে মাওলানা সা’দ অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা।
১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় দফা তথা বিশ্ব ইজতেমার ৫৭তম আসর। বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে এগিয়ে চলছে প্রস্তুতি কাজ। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে প্রায় ১৬০ একর জমির ওপর তাবলীগ জামাতের সদস্যদের থাকার জন্য বিশাল চটের প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছে। মঞ্চ নির্মাণ, মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে টিনের চালা ও ইটের গাঁথুনির দেয়াল দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বিদেমি মেহমানদের আবাসন ব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক নিবাসে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিফোন সংযোগসহ আধুনিক বিভিন্ন সুবিধা রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে।
ইজতেমা মাঠে আগমনরত মুসল্লিদের সুবিধার্থে খাবার পানি, অজুখানা, গোসলখানা সংস্কার, পুরনো টিউবওয়েল, বাথরুম ও কাচাঁ-পাকা টয়লেট সংস্কার, ইটের সলিং করা রাস্তা তৈরি ও পুরনো ভাঙাচোরা রাস্তা-ড্রেন সংস্কার করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ লাইন, গ্যাস লাইন, পানির পাইপ লাইন, পানির ট্যাঙ্কি বসানো, বাঁশের খুঁটি বসানো, নামাজের দাগ কাটা, মাঠের ময়লা-আবর্জনা পরিস্কারসহ প্যান্ডেল সাজ-গোছের কাজ করা হচ্ছে। ময়দানের পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব পাশের নিচু স্থানে বালি ফেলে উঁচু করা হয়েছে। মুসল্লিদের যাতায়াতে যাতে কোন রকম ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য তুরাগ নদে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা ভাসমান পন্টুন সেতু নির্মাণ করবেন। মাঠে মুসল্লিদের অবস্থানও জেলাওয়ারি নির্দিষ্ট খিত্তায় (ভাগে) বিভক্ত করা হচ্ছে। ময়দানে তাবলীগ জামাতের অনুসারী সদস্য, স্থানীয় মাদরাসা, স্কুল কলেজের ছাত্র-শিক্ষক, বিভিন্ন সরকারি-আধা সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এসব কাজ করছেন।
ঢাকার বাদামতলী থেকে শতাধিক মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে এসেছেন স্বেচ্ছায় কাজ করতে। তাদের মধ্যে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আল্লাহর কাজে এসেছি। যাতে আল্লাহ খুশি হয়ে আমাদের গুনাহ মাফ করে দেন।’
ঢাকার আশুলিয়া থেকে আসা মিয়াজ উদ্দিন জানান, মনের আবেগে স্বেচ্ছায় কাজ করতে এসেছি। টঙ্গী বউবাজার নেকার বাড়ি মসজিদের ইমাম হাদীউজ্জামান বলেন, ‘আমরা ৩০জন এসেছি স্বেচ্ছায় কাজ করতে। উদ্দেশ্য আল্লাহর রাস্তায় কাজ করলে আল্লাহ খুশি হবেন।’
ইজতেমা ময়দানে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে আসা চাঁদপুর জেলার কবির হোসেন বলেন, ‘ইজতেমা ময়দানে কাজ করতে পারলে নিজেকে পূণ্যবান মনে হয়, তাই স্বেচ্ছাশ্রমে ময়দানের কাজ করতে এসেছি। যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিনই ময়দানের কাজ করে যাব।’
মঞ্চ নির্মাণকারী আলমগীর হোসেন জানান, আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শেষ হবে। বিদ্যুতের দায়িত্বে নিয়োজিত আ. মমিন জানান, বিভিন্ন খুঁটিতে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। আশা করি ইজতেমা শুরুর আগেই কাজ সমাপ্ত হবে।
ইজতেমা ময়দানের ভেতরে রাস্তা মেরামত কাজে নিয়োজিত রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিদেশি কামরা থেকে মেহমানরা যাতে স্বাচ্ছন্দে বয়ান মঞ্চে ও আশপাশে যেতে পারে সেজন্য রাস্তায় সয়েলিংয়ের কাজ করছি।’
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার কাজ চলছে। বিশ্ব ইজতেমা সফল করতে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যথা সময়ে সকল কাজ শেষ হবে।’